শিশুরা যখন খেতে চায় না বা খেতে পারে না, তখন অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং তাদের জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন অথবা বকাঝকা করেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে শিশুরা খাওয়া নিয়ে আরও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে।
এখানে আমরা আলোচনা করব কেন ছোট শিশুদের জোর করা বা বকাঝকা করা উচিত নয় এবং এর পরিবর্তে কীভাবে তাদের খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহিত করা যায়।
শিশুরা কেন খেতে চায় না?
শিশুরা অনেক কারণে খেতে চায় না। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হতে পারে:
- খাবারের রঙ ও স্বাদ পছন্দ না করা: শিশুরা বিভিন্ন রঙ ও স্বাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে এবং নতুন খাবারের স্বাদ পছন্দ না করতে পারে।
- অসুস্থতা: শিশু অসুস্থ থাকলে তার খাওয়ার ইচ্ছে কমে যেতে পারে।
- খাবারের ধরন: কিছু খাবার খুব শক্ত বা কঠিন হতে পারে যা শিশুরা খেতে পারে না।
জোর করা বা বকাঝকা করার ক্ষতি
শিশুদের জোর করে খাওয়ানোর বা বকাঝকা করার ফলে তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এখানে কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:
মানসিক প্রভাব
শিশুরা যখন খাওয়া নিয়ে বকাঝকা খায়, তখন তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খাওয়ার প্রতি আরও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।
উদাহরণ:
যদি কোনো শিশু প্রতিবার খাবার নিয়ে বকাঝকা খায়, তবে সে খাওয়ার সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে এবং খাবার খেতে আরও অনীহা প্রকাশ করতে পারে।
শারীরিক প্রভাব
জোর করে খাওয়ানোর ফলে শিশুরা শারীরিকভাবে অস্বস্তি বোধ করতে পারে এবং খাবার গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
উদাহরণ:
যদি কোনো শিশুকে জোর করে খাবার খাওয়ানো হয়, তবে সে বমি করতে পারে বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
খাওয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব
শিশুরা যদি সবসময় খাওয়ার সময় বকাঝকা খায়, তবে তাদের খাওয়ার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে এবং তারা খাবারকে এড়িয়ে যেতে পারে।
উদাহরণ:
যদি কোনো শিশু প্রতিবার খাবার নিয়ে বকাঝকা খায়, তবে সে খাওয়ার সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে এবং খাবার খেতে আরও অনীহা প্রকাশ করতে পারে।
শিশুকে খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করার পদ্ধতি
শিশুদের খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য কিছু ইতিবাচক পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এখানে কিছু পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
বিভিন্ন ধরণের খাবার প্রস্তাব করা
শিশুদের বিভিন্ন ধরণের খাবার প্রস্তাব করা উচিত যাতে তারা বিভিন্ন স্বাদ এবং রঙের সাথে পরিচিত হতে পারে।
উদাহরণ:
“কিডস ওয়ার্কশীট বান্ডেল” এর মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন ধরণের খাবার নিয়ে শিখতে এবং খেলতে পারে, যা তাদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে পারে।
খাওয়ার সময় মজার পরিবেশ তৈরি করা
খাওয়ার সময় একটি মজার এবং আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করা উচিত যাতে শিশুরা খাওয়ার সময় আনন্দ পায়।
উদাহরণ:
খাবার খাওয়ার সময় শিশুর প্রিয় গল্প বলা বা তার সাথে খেলা করা যেতে পারে।
শিশুকে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা
শিশুদের খাবার প্রস্তুতিতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা উচিত যাতে তারা খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়।
উদাহরণ:
শিশুকে রান্নার সময় ছোট ছোট কাজ করতে দেওয়া যেতে পারে, যেমন সবজি ধোয়া বা ফল কাটার সাহায্য করা।
খাবারের সুন্দর উপস্থাপন
খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা উচিত যাতে শিশুরা খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
উদাহরণ:
খাবারকে বিভিন্ন আকৃতিতে কেটে প্লেটে সাজানো যেতে পারে, যা শিশুরা খেতে আগ্রহী হবে।
ধৈর্যশীল হওয়া
শিশুদের খাওয়ানোর সময় ধৈর্যশীল হওয়া উচিত। তারা হয়তো প্রথমবারেই নতুন খাবার পছন্দ করবে না, কিন্তু ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে তারা নতুন খাবার খেতে শুরু করতে পারে।
উদাহরণ:
যদি কোনো শিশু প্রথমবার ব্রোকলি পছন্দ না করে, তবে বারবার তাকে ব্রোকলি খাওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া
শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়া উচিত যাতে তারা সব ধরণের পুষ্টি পায়।
উদাহরণ:
তাজা ফল, সবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, এবং দুধ শিশুর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
উপসংহার
শিশুদের খাওয়ানোর সময় জোর করা বা বকাঝকা করা কোনো সমাধান নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের উচিত তাদের খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা এবং একটি মজার ও আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করা।
বিভিন্ন ধরণের খাবার প্রস্তাব করা, খাওয়ার সময় মজার পরিবেশ তৈরি করা, শিশুকে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা, এবং খাবারের সুন্দর উপস্থাপন করার মাধ্যমে আমরা শিশুরা খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করতে পারি।
“কিডস ওয়ার্কশীট বান্ডেল” এর মত উপকরণগুলি ব্যবহার করে আমরা শিশুদের শাস্তি না দিয়ে শিখতে উৎসাহিত করতে পারি। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা শিশুদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারি।