শিশুদের মন জয় করা খুবি সহজ। তাদের কোলে নিয়ে চিপস বা চকোলেটের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলেই তারা মহা খুশি।
এই টেকনিক অনেক আগে থেকেই চলে এসেছে। প্রায় ৯০% লোকেই এই নিয়ম ফলো করে হোক সেটা নিজের বাচ্চা বা অন্যের।
বাচ্চাদের মন জয় করতে ও শিশুর খিটখিটে স্বভাব দূর করতে আমরা আরো যে ভুলগুলো করি সেগুলো হলো:
- দোকানে নিয়ে বাচ্চাকে মিষ্টি, জুস, বা ফাস্টফুড জাতীয় কিছু খাইয়ে দেয়া।
- মোবাইল/CD/DVD চালিয়ে দিয়ে বাচ্চাকে বসিয়ে দেয়া।
- মোবাইলে/iPhone/বা X-Box এ বাচ্চাকে গেম দরিয়ে দেয়া
- কিছু টাকা দিয়ে বাচ্চাকে ছেড়ে দেওয়া যেন নিজের খুশি মতো কিছু কিনে নেয় ইত্যাদি।
এই নিয়ম গুলোর ঘোর বিরোধী আমি নোই তবে এইগুলো সঠিক নিয়ম ও নোই। আজ বাচ্চাকে ছোট ছোট জিনিস দিয়ে পোষ মানাতে চাচ্ছেন ভালো কথা। কাল যদি সে বড় হয়ে একেবারে দামি কিছু চায় এবং সেটা দেওয়ার সামর্থ যদি আপনার না থাকে তখন? কারণ সে তো এটাই জানে যে, সে যেটা চাইবে আপনি সেটাই দিয়ে তাকে খুশি করবেন।
কেউ আবার মনে করতে পারেন এই বেরসিক মানুষটি নিশ্চয় বাচ্চাদের বই দরিয়ে দেওয়ার কথা বলবে। প্লিজ ভাই এটা মনে কইরেন না🙂।
কারন আপনি বাচ্চাদের যে অভ্যাস এতদিনে তৈরী করেছেন তা বই দিলে পরিবর্তন হবে না। তবে কি করা উচিত?
আজকে চলুন দেখে আসি কিভাবে শিশুর খিটখিটে স্বভাব দূর করে শিশুদের মন জয় করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
১. ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদান
শিশুদের মন জয় করার প্রথম ও প্রধান উপায় হলো তাদের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদর্শন করা। শিশুদের মন ও মনোবল ভালোবাসা ও স্নেহে বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন তাদের প্রতি আপনার স্নেহ ও যত্ন প্রকাশ করুন। একটুখানি স্নেহপূর্ণ আলিঙ্গন, মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া বা প্রশংসার মাধ্যমে আপনি তাদেরকে বোঝাতে পারেন যে আপনি তাদের কতটা ভালোবাসেন।
২. সময় দিন ও শুনুন
শিশুরা আপনার সময় ও মনোযোগকে অত্যন্ত মূল্য দেয়। আপনার ব্যস্ত জীবনে একটু সময় তাদের সাথে কাটান। তাদের কথা শুনুন, তাদের সমস্যাগুলি বুঝুন এবং তাদের সাথে মজার মুহূর্ত কাটান। এতে তারা অনুভব করবে যে আপনি তাদের কথা শুনতে ও বুঝতে চান।
৩. খেলা ও শৈল্পিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
শিশুরা খেলা ও শৈল্পিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে ভালোবাসে। তাদের সাথে খেলাধুলা করুন, ছবি আঁকুন, গেমস খেলুন। এতে শিশুদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং তারা আপনাকে আরও বেশি ভালোবাসতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘কিডস ওয়ার্কশীট‘ তাদের শিক্ষণীয় ও মজার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের একটি উপায় হতে পারে। এতে তারা শিক্ষা ও খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দ পাবে।
৪. প্রশংসা ও স্বীকৃতি দিন
শিশুরা প্রশংসা ও স্বীকৃতির মাধ্যমে উত্সাহিত হয়। যখনই তারা কিছু ভালো কাজ করে বা কোন নতুন দক্ষতা অর্জন করে, তখন তাদের প্রশংসা করুন। এটি তাদের মনোবল বাড়ায় এবং তারা আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহী হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘কিডস ওয়ার্কশীট‘ সম্পূর্ণ করার পর তাদেরকে প্রশংসা করতে পারেন, যা তাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে।
৫. সীমা ও নিয়ম স্থাপন
শিশুরা সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে আরও ভালো করে শিখতে পারে। সঠিক সীমা ও নিয়ম স্থাপন করে তাদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের শিক্ষা দিন। তবে মনে রাখবেন, নিয়মগুলি যুক্তিসঙ্গত ও শিশুদের বয়স উপযোগী হওয়া উচিত।
৬. উৎসাহ ও মোটিভেশন দিন
শিশুদের তাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য উৎসাহ ও মোটিভেশন দিন। তাদের শক্তি ও আগ্রহকে সঠিকভাবে নির্দেশ করুন এবং তাদেরকে আপনার সাপোর্ট ও প্রেরণা দিয়ে শক্তিশালী করুন।
৭. রুটিন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখুন
শিশুরা সাধারণত একটি নিয়মিত রুটিনে ভালো থাকে। তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়মতো ঘুম, খাওয়া, খেলা ও পড়াশোনা করতে সহায়তা করুন। এতে তাদের জীবন শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সহজ হয়।
৮. মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ দিন
শিশুরা তাদের অনুভূতি ও ভাবনা প্রকাশ করার সুযোগ পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাদেরকে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে দিন এবং তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে তারা আপনার প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা অনুভব করবে।
৯. পাঠ্যপুস্তকের বাইরে শিখতে সহায়তা করুন
শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে শিখতে উৎসাহিত করুন। তাদেরকে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলি সমাধান করতে শেখান। উদাহরণস্বরূপ, ‘কিডস ওয়ার্কশীট’ ব্যবহার করে শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে শিখাতে পারেন, যা তাদের চিন্তা শক্তি ও সৃজনশীলতাকে বাড়াবে।
১০. স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন
শিশুদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। তাদেরকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহিত করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করতে বলুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। এতে তারা শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকবে।
উপসংহার
শিশুদের মন জয় করা একটি ধৈর্য্যশীল ও অবিরাম প্রক্রিয়া। এটি শুধুমাত্র তাদের জন্যই নয়, আপনার সম্পর্ককেও মজবুত করে তোলে। আপনার প্রতিটি ছোট প্রচেষ্টা তাদের জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, তাদের ভালোবাসা, সময়, স্নেহ ও প্রশংসা দিয়ে তাদেরকে সুখী ও সফল করতে সাহায্য করুন।