আপনার বাচ্চা কি পড়াশুনায় অমনোযোগী ? ভাবছেন বাচ্চাদের পড়াশুনার প্রতি কিভাবে আগ্রহী করে তুলবেন?
শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে সঠিক পদ্ধতি ও মনোভাব গ্রহণ করলে এই চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করা সম্ভব।
প্রথমে বাচ্চাদের পড়াশুনায় অমনোযোগী হওয়ার কারণ গুলো খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেগুলো সমাধান করে বাচ্চাদের মন জয় করে তাদের পড়াশুনায় মেধাবী করে তুলতে হবে।
নিচে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ২০ টি উপায় উপায় উল্লেখ করা হল যেগুলো প্রয়োগ করে আপনি আপনার শিশুকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে পারেন।
১. উপযুক্ত পাঠ্যবই নির্বাচন
শিশুর আগ্রহ অনুযায়ী উপযুক্ত পাঠ্যবই নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। আকর্ষণীয় ছবি, সহজ ভাষা, এবং মজার গল্পসমূহ দিয়ে সাজানো বই শিশুরা পড়তে পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে বাজারে প্রি স্কুল শিশুদের জন্য অনেক বই পাওয়া যায় সেগুলো কিনতে পারেন।
২. পড়াশোনাকে খেলা হিসেবে উপস্থাপন
পড়াশোনা যেন বোঝা মনে না হয় সে জন্য একে খেলার মতো উপস্থাপন করুন। যেমন, অক্ষর চিনতে বা শব্দ গঠনের খেলা খেলানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিডস ওয়ার্কশীট বান্ডেল থেকে বিভিন্ন শব্দ গঠন ও ছবি মেলানোর খেলা নির্বাচন করা যেতে পারে।
৩. গল্প বলা
শিশুদের গল্প শুনতে বেশ ভালো লাগে। তাই বিভিন্ন শিক্ষামূলক গল্প শুনিয়ে পড়াশোনার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ানো যায়। প্রতিদিন রাতে একটি করে শিক্ষামূলক গল্প শোনানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. পড়াশোনার সময় নির্ধারণ
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা করানো অভ্যাস করুন। এতে শিশুর মধ্যে শৃঙ্খলা এবং দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। উদাহরণস্বরূপ, স্কুল থেকে ফেরার পর ১ ঘণ্টা পড়াশোনার জন্য নির্ধারণ করতে পারেন।
৫. শিক্ষামূলক ভিডিও
বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও, অ্যানিমেশন বা কার্টুনের মাধ্যমে শেখানো যেতে পারে। এতে শিশুদের মজাও হবে এবং পড়াশোনায় আগ্রহও বাড়বে। ইউটিউবে অনেক শিক্ষামূলক চ্যানেল পাওয়া যায় যেগুলো শিশুদের জন্য উপযুক্ত।
৬. বাস্তব জীবনের উদাহরণ
পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করুন। এতে শিশু বিষয়গুলো সহজেই বুঝতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, গণিতের অংক শেখানোর সময় বাজারে কেনাকাটা করার উদাহরণ দিতে পারেন।
৭. সৃজনশীল কাজ
শিশুরা সৃজনশীল কাজ করতে পছন্দ করে। আঁকাআঁকি, ক্রাফটিং বা সৃজনশীল প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় শেখানো যেতে পারে। কিডস ওয়ার্কশীট বান্ডেলে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের ওয়ার্কশীট রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে শিশুরা আনন্দের সাথে শিখতে পারবে।
৮. প্রশংসা ও উৎসাহ
শিশু ভালো করলে তাকে প্রশংসা ও পুরস্কৃত করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, ভালো ফলাফলের জন্য ছোট উপহার বা সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারেন।
৯. পড়াশোনার পরিবেশ
শান্ত এবং মনোরম পরিবেশে পড়াশোনা করানোর ব্যবস্থা করুন। এতে শিশু পড়ায় মনোযোগ দিতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, পড়ার টেবিলটি সাজিয়ে রাখুন এবং পড়ার জায়গায় কোনও ধরনের বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন কিছু রাখবেন না।
১০. নিয়মিত পরীক্ষা
নিয়মিত ছোট ছোট পরীক্ষা নিয়ে শিশুর পড়াশোনা যাচাই করুন। এতে তার পড়াশোনার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন। কিডস ওয়ার্কশীট বান্ডেলে বিভিন্ন বিষয়ের ছোট ছোট কুইজ ও টেস্টের ওয়ার্কশীট পাওয়া যায়।
১১. শিক্ষা সফর
বিভিন্ন শিক্ষামূলক স্থানে নিয়ে গিয়ে শিশুকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ দিন। যেমন, মিউজিয়াম, পার্ক, বা সায়েন্স সেন্টার। এসব জায়গায় শিশুরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
১২. পড়াশোনার সঙ্গী
পড়াশোনার জন্য সহপাঠী বা বন্ধুর সাথে পড়তে দিন। এতে তারা একে অপরকে সাহায্য করতে পারবে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবে। গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে শিশুরা একে অপরের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারবে এবং একসাথে মজা করে শিখতে পারবে।
১৩. বই পড়ার অভ্যাস গঠন
শিশুকে বই পড়ার অভ্যাস গঠনের চেষ্টা করুন। রোজ একটি নির্দিষ্ট সময় বই পড়ার জন্য নির্ধারণ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন রাতে ৩০ মিনিট বই পড়ার সময় নির্ধারণ করা।
১৪. পাঠের লক্ষ্য স্থির করা
প্রতিদিন বা প্রতিসপ্তাহে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন। লক্ষ্য পূরণ হলে তাকে ছোট পুরস্কার দিন। উদাহরণস্বরূপ, এক সপ্তাহে একটি বই শেষ করতে পারলে তাকে একটি ছোট খেলনা উপহার দিতে পারেন।
১৫. শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ
শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। তাদের থেকে শিশুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানুন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিন। শিক্ষকেরা শিশুর দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারেন।
১৬. পড়াশোনার পদ্ধতি
শিশুর পড়াশোনার পদ্ধতি নির্ধারণ করুন। কোন সময় পড়বে, কোন বিষয় আগে করবে ইত্যাদি। একটি পরিকল্পনা তৈরি করে প্রতিদিন তা মেনে চলতে শিশুকে সাহায্য করুন।
১৭. প্রযুক্তির ব্যবহার
প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন অ্যাপ বা অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করে পড়াশোনা করানো যেতে পারে। এটি শিশুদের জন্য মজাদার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষামূলক গেম বা অ্যাপ ব্যবহার করে শিশুকে শেখানো।
১৮. পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝানো
শিশুকে পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝান। তাকে জানাতে হবে যে পড়াশোনা তার ভবিষ্যৎ গঠনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, পড়াশোনার মাধ্যমে কিভাবে বড় হয়ে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে তা ব্যাখ্যা করুন।
১৯. নিজের উদাহরণ
শিশুর সামনে পড়াশোনা করুন বা বই পড়ুন। আপনার দেখাদেখি সেও পড়াশোনায় আগ্রহী হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি বই পড়তে শুরু করলে আপনার সন্তানও বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হবে।
২০. ধৈর্য এবং ভালোবাসা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধৈর্য ধরা এবং ভালোবাসা প্রদর্শন করা। শিশুকে চাপ না দিয়ে ভালোবাসার সাথে শেখানোর চেষ্টা করুন। শিশুর ছোট ছোট অগ্রগতিকেও সেলিব্রেট করুন এবং তাকে সবসময় উৎসাহ দিন।
এই ২০টি উপায় প্রয়োগ করে আপনি সহজেই আপনার শিশুর মধ্যে পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ তৈরি করতে পারবেন। প্রতিটি শিশুই আলাদা, তাই তাকে বুঝে এবং তার প্রয়োজন অনুযায়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করাই শ্রেয়।
বোনাস টিপস: কিডস ওয়ার্কশীট ব্যবহার করুন
প্রি স্কুল কিডস ওয়ার্কশীট হল এমন কিছু শিক্ষামূলক পৃষ্ঠা, যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে শিশুদের শিক্ষার জন্য তৈরি করা হয়। এই ওয়ার্কশীটগুলোতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ থাকে যা শিশুদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় এবং তাদের বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে। যেমন: অক্ষর চেনা, সংখ্যা গণনা, ছবি আঁকা, রঙ করা, পাজল সমাধান করা ইত্যাদি।
এই ওয়ার্কশীটগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে শিশুরা মজা করে শিখতে পারে। বাচ্চারা ছবি দেখে অক্ষর ও সংখ্যা চেনা শিখতে পারে, গল্প পড়তে পারে, এবং বিভিন্ন খেলা বা কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। এতে করে শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে কিছু প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যায়, যা তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনে সাহায্য করে।
বাংলাদেশে প্রি স্কুল কিডস ওয়ার্কশীটগুলো বাবা-মা এবং শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, যা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করে।
তবে আমরা সাজেস্ট করবো প্রিন্টেবল প্রি স্কুল কিডস ওয়ার্কশীট গুলো ব্যবহার করুন যেগুলো প্রিন্ট করে ব্যবহার করা যায়। এগুলো সাধারণ ওয়ার্কশীট এর মতোই তবে সুবিধা হচ্ছে এগুলো পিডিএফ, ইমেজ, বা ইবুক ফরমেটে থাকে, যা সহজেই প্রিন্টআউট করে আনলিমিটেড লাইফটাইম ব্যবহার করা যায়।
কীভাবে স্মার্ট কিন্তু অলস শিশুকে পড়াশুনায় অনুপ্রাণিত করবেন?
অলস কিন্তু স্মার্ট শিশুকে পড়াশুনায় অনুপ্রাণিত করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে সঠিক পদ্ধতিতে এটি সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকর পরামর্শ রয়েছে যা আপনার শিশুদের পড়াশুনায় আগ্রহী করতে সাহায্য করবে:
১. পজিটিভ এনভায়রনমেন্ট তৈরি করুন
শিশুরা সাধারণত ইতিবাচক পরিবেশে সবচেয়ে ভালো শেখে। তাই ঘরে একটি পজিটিভ এবং প্রশংসাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন।
২. ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
শিশুদের জন্য বড় লক্ষ্য স্থির করা কঠিন হতে পারে। তাই ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং প্রতিটি লক্ষ্য পূরণের পর তাদের প্রশংসা ও পুরস্কৃত করুন।
৩. পড়াশুনার সময় মজার করুন
শিক্ষাকে মজার এবং আকর্ষণীয় করে তুলুন। খেলাধুলা, গল্প, এবং বিভিন্ন মজার কার্যকলাপের মাধ্যমে শিশুদের শেখানোর চেষ্টা করুন।
৪. নিয়মিত বিরতি দিন
লম্বা সময় ধরে পড়াশুনা শিশুদের ক্লান্ত করে দিতে পারে। তাই নিয়মিত বিরতি দিন এবং বিরতির সময় তাদের প্রিয় কিছু করতে দিন।
৫. পড়াশুনার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পড়াশুনার জন্য বরাদ্দ করুন। এটি একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হলে শিশুদের পড়াশুনার সময় মেনে চলা সহজ হবে।
৬. নিজে উদাহরণ তৈরি করুন
শিশুরা পিতামাতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে। তাই আপনি নিজেও পড়াশুনা করুন এবং তাদের দেখান যে পড়াশুনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
৭. পছন্দের বিষয়গুলোকে ফোকাস করুন
শিশুরা তাদের পছন্দের বিষয়গুলোতে বেশি আগ্রহী হয়। তাই তাদের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করতে উৎসাহিত করুন।